সমস্ত লেখাগুলি

ভূত চতুর্দশী ও ব্যবসা -
ক্রান্তিকারী শুভাশিষ
Nov. 18, 2024 | ভূত | views:280 | likes:0 | share: 0 | comments:0

ভূত চতুর্দশী। বাঙালির হ্যালোইন। কুমড়োর লণ্ঠন তৈরি, ঘর সাজানো, ছোট ছোট বাচ্চারা নানা বিচিত্র পোশাক পরে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ানো এইসব নানাবিধ কার্যকলাপের মাধ্যমে উৎসবের মেজাজে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে হ্যালোইন পালিত হলেও বাংলায় ভূত চতুর্দশী পালিত হয় যথেষ্ট নিষ্ঠাভরে। যদিও উভয় ক্ষেত্রেই বিশ্বাস থেকেই জন্ম নিয়েছে এই উৎসব। বিশেষ ধর্মালম্বী মানুষজনদের মতে দীপান্বিতা অমাবস্যার আগের দিন অর্থাৎ কার্তিক মাসের কোজাগরী পূর্ণিমার পরবর্তী চতুর্দশী তিথির দিনটিকে বলা হয় ভূত চতুর্দশী। ভূত চতুর্দশী নিয়ে নানা পৌরাণিক গল্প কথা থাকলেও মূল বিষয় হল এই দিন মৃত পূর্বপুরুষরা ধরাধামে নেমে আসে। তাই এত আয়োজনের ঘনঘটা। এই দিন দিনের বেলায় ১৪ রকমের শাক খেয়ে রাতে ১৪ প্রদীপ জ্বালিয়ে নিষ্ঠাভরে পালন করার রেওয়াজ বঙ্গবাসীর দীর্ঘদিনের।


এ তো গেল বিশ্বাসের কথা। কিন্তু এই ভৌতিক বিশ্বাসকেই এক শ্রেণীর প্রচারমাধ্যম সুকৌশলে বিকিকিনির উপকরণে পরিণত করেছে। একটা সময় অবধি ভূত-প্রেত-আত্মা এই সমস্ত বিষয়গুলি নির্দিষ্ট কিছু উপন্যাস, গল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে অবস্থাটা অন্যরকম আকার নিয়েছে। সংবিধানের 51A(h) ধারাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একশ্রেণীর প্রচারমাধ্যম অধিক মুনাফার আশায় প্রতিবার এই সময়ে এমন কিছু সংবাদ পরিবেশন করে যা শুধু নিন্দনীয় নয়, বিজ্ঞানমনস্কতা প্রসারে পরিপন্থী। গত বছরই বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রের শিরোনামে উঠে আসে "হদিস মিলল সাত রকম আত্মার, ভূত খুঁজতেই ঘাড় ধাক্কা।" সেই সাথে জুড়েছে কোনো প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান, বসতিহীন রাজবাড়ী, পরিত্যক্ত রেলস্টেশন গুলিকে 'Ghost Tourism' -এ রূপান্তরিত করার নতুন পন্থা। বেগুনকোদর তার জ্বলন্ত উদাহরণ। অনুঘটক হিসাবে উদয় হয়েছে একদল ভূত বিশেষজ্ঞ। যাদের পোশাকি নাম 'প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর'। আধুনিক বিজ্ঞানের কিছু যন্ত্রপাতিকে সম্বল করে মানুষকে সুকৌশলে বোকা বানানোর চেষ্টা রীতিমতো উদ্বেগজনক। সেই সাথে রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষদের কৌতূহলকে পাথেয় করে কখনও কখনও বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে এইসব প্যারানর্মাল ইনভেস্টিগেটররা লাইভে আত্মার অস্তিত্ব দেখানোর চেষ্টায় এগিয়ে চলেছে। আমরা এই ঘটনা চাক্ষুষ করেছি বাঙালির ঘরে ঘরে ঠাঁই পাওয়া জি বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় টিভি শো দাদাগিরিতে; যা নিয়ে বিতর্কের অবসান এখনো ঘটেনি। এই কাণ্ডকারখানা যুক্তিবাদীদের কাছে হাস্যকর মনে পারে, কিন্তু বিষয়টি ভাববার। তার সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমাগত বেড়ে চলা অপবিজ্ঞান চর্চা তো আছেই। রাষ্ট্রের পরিচালন ব্যবস্থা এক্ষেত্রে ঠুঁটো জগন্নাথ।


বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্তির অনিবার্য সংঘাত হিসাবে যুক্তিবাদীদেরকে এই বিষয়ে আরো বেশি অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। কখনও কখনও দেখা যায় এই বিশ্বাসকে অপযুক্তির হাত ধরে উপরে ওঠার চেষ্টা করে, একটি ধারণা তৈরী করে। কিন্তু সেই অপচেষ্টাকে আমাদের যুক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতেই হবে। অনেকে ১৪ শাক খাওয়ার স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে খাড়া করেন, ঋতু পরিবর্তনের সময় ১৪ শাক খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো, বিশেষ করে তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সহায়ক। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে, কীভাবে একটি বিশেষ দিনে ১৪ রকমের শাক কিঞ্চিৎ পরিমাণ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে বিপুল পরিমাণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। প্রশ্ন উঠবে শুধুমাত্র ঐ দিনেই কেন? আগে বা পরে নয় কেন? প্রশ্ন ওঠা উচিত একইভাবে ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর ক্ষেত্রেও তাদের দেওয়া যুক্তির। প্যারানর্মাল ইনভেস্টিগেটরদের ব্যাপারে বলি, এই সমস্ত প্রতারকদের যতবার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ডাকা হয়েছে তাদের টিকি পাওয়া যায়নি। তাই সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের সংবিধানের 51A(h) ধারার গুরুত্ব বুঝে এই সমস্ত মিথ্যা বিভ্রান্তিকর অপবিজ্ঞান সংবাদ শেয়ার করা থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়। সবজান্তা মধ্যবিত্ত মানসিকতা লোকজনদের পাত্তা না দিয়ে এইসব অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানমনস্কতার মশাল জ্বালতেই হবে।

ভূত চতুর্দশী ও ব্যবসা -
ক্রান্তিকারী শুভাশিষ
Nov. 18, 2024 | যুক্তিবাদ | views:880 | likes:0 | share: 0 | comments:0

ভূত চতুর্দশী। বাঙালির হ্যালোইন। কুমড়োর লণ্ঠন তৈরি, ঘর সাজানো, ছোট ছোট বাচ্চারা নানা বিচিত্র পোশাক পরে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ানো এইসব নানাবিধ কার্যকলাপের মাধ্যমে উৎসবের মেজাজে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে হ্যালোইন পালিত হলেও বাংলায় ভূত চতুর্দশী পালিত হয় যথেষ্ট নিষ্ঠাভরে। যদিও উভয় ক্ষেত্রেই বিশ্বাস থেকেই জন্ম নিয়েছে এই উৎসব। বিশেষ ধর্মালম্বী মানুষজনদের মতে দীপান্বিতা অমাবস্যার আগের দিন অর্থাৎ কার্তিক মাসের কোজাগরী পূর্ণিমার পরবর্তী চতুর্দশী তিথির দিনটিকে বলা হয় ভূত চতুর্দশী। ভূত চতুর্দশী নিয়ে নানা পৌরাণিক গল্প কথা থাকলেও মূল বিষয় হল এই দিন মৃত পূর্বপুরুষরা ধরাধামে নেমে আসে। তাই এত আয়োজনের ঘনঘটা। এই দিন দিনের বেলায় ১৪ রকমের শাক খেয়ে রাতে ১৪ প্রদীপ জ্বালিয়ে নিষ্ঠাভরে পালন করার রেওয়াজ বঙ্গবাসীর দীর্ঘদিনের।


এ তো গেল বিশ্বাসের কথা। কিন্তু এই ভৌতিক বিশ্বাসকেই এক শ্রেণীর প্রচারমাধ্যম সুকৌশলে বিকিকিনির উপকরণে পরিণত করেছে। একটা সময় অবধি ভূত-প্রেত-আত্মা এই সমস্ত বিষয়গুলি নির্দিষ্ট কিছু উপন্যাস, গল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে অবস্থাটা অন্যরকম আকার নিয়েছে। সংবিধানের 51A(h) ধারাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একশ্রেণীর প্রচারমাধ্যম অধিক মুনাফার আশায় প্রতিবার এই সময়ে এমন কিছু সংবাদ পরিবেশন করে যা শুধু নিন্দনীয় নয়, বিজ্ঞানমনস্কতা প্রসারে পরিপন্থী। গত বছরই বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রের শিরোনামে উঠে আসে "হদিস মিলল সাত রকম আত্মার, ভূত খুঁজতেই ঘাড় ধাক্কা।”সেই সাথে জুড়েছে কোনো প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান, বসতিহীন রাজবাড়ী, পরিত্যক্ত রেলস্টেশন গুলিকে 'Ghost Tourism' -এ রূপান্তরিত করার নতুন পন্থা। বেগুনকোদর তার জ্বলন্ত উদাহরণ। অনুঘটক হিসাবে উদয় হয়েছে একদল ভূত বিশেষজ্ঞ। যাদের পোশাকি নাম 'প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর'। আধুনিক বিজ্ঞানের কিছু যন্ত্রপাতিকে সম্বল করে মানুষকে সুকৌশলে বোকা বানানোর চেষ্টা রীতিমতো উদ্বেগজনক। সেই সাথে রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষদের কৌতূহলকে পাথেয় করে কখনও কখনও বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে এইসব প্যারানর্মাল ইনভেস্টিগেটররা লাইভে আত্মার অস্তিত্ব দেখানোর চেষ্টায় এগিয়ে চলেছে। আমরা এই ঘটনা চাক্ষুষ করেছি বাঙালির ঘরে ঘরে ঠাঁই পাওয়া জি বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় টিভি শো দাদাগিরিতে; যা নিয়ে বিতর্কের অবসান এখনো ঘটেনি। এই কাণ্ডকারখানা যুক্তিবাদীদের কাছে হাস্যকর মনে পারে, কিন্তু বিষয়টি ভাববার। তার সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমাগত বেড়ে চলা অপবিজ্ঞান চর্চা তো আছেই। রাষ্ট্রের পরিচালন ব্যবস্থা এক্ষেত্রে ঠুঁটো জগন্নাথ।


বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্তির অনিবার্য সংঘাত হিসাবে যুক্তিবাদীদেরকে এই বিষয়ে আরো বেশি অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। কখনও কখনও দেখা যায় এই বিশ্বাসকে অপযুক্তির হাত ধরে উপরে ওঠার চেষ্টা করে, একটি ধারণা তৈরী করে। কিন্তু সেই অপচেষ্টাকে আমাদের যুক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতেই হবে। অনেকে ১৪ শাক খাওয়ার স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে খাড়া করেন, ঋতু পরিবর্তনের সময় ১৪ শাক খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো, বিশেষ করে তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সহায়ক। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে, কীভাবে একটি বিশেষ দিনে ১৪ রকমের শাক কিঞ্চিৎ পরিমাণ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে বিপুল পরিমাণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। প্রশ্ন উঠবে শুধুমাত্র ঐ দিনেই কেন? আগে বা পরে নয় কেন? প্রশ্ন ওঠা উচিত একইভাবে ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর ক্ষেত্রেও তাদের দেওয়া যুক্তির। প্যারানর্মাল ইনভেস্টিগেটরদের ব্যাপারে বলি, এই সমস্ত প্রতারকদের যতবার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ডাকা হয়েছে তাদের টিকি পাওয়া যায়নি। তাই সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের সংবিধানের 51A(h) ধারার গুরুত্ব বুঝে এই সমস্ত মিথ্যা বিভ্রান্তিকর অপবিজ্ঞান সংবাদ শেয়ার করা থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়। সবজান্তা মধ্যবিত্ত মানসিকতা লোকজনদের পাত্তা না দিয়ে এইসব অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানমনস্কতার মশাল জ্বালতেই হবে।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86933